গত বছর বাংলাদেশে ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর গড়ে ওঠা রাজনৈতিক সংগঠন ‘ইনকিলাব মঞ্চ’র মুখপাত্র এবং আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুর ঘটনায় গতরাতে সারা দেশে বিক্ষোভ মিছিল করেছে ছাত্র-জনতাসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনগুলো।

বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে ৯টায় সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান শরিফ ওসমান হাদি।

এই খবর ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে ঢাকা সহ সারা দেশে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী ইনকিলাব মঞ্চের নেতৃবৃন্দ ছাত্র জনতাকে ঢাকার শাহবাগে উপস্থিত হওয়ার আহ্বান জানান। রাত ১১টার মধ্যে শাহবাগ লোকে লোকারণ্য হয়ে পড়ে। এ সময় ইনকিলাব মঞ্চের কর্মসূচির সাথে সংহতি জানিয়ে শাহাবাগের বিক্ষোভ সমাবেশে যোগ দেন এনসিপি’র (ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টি) ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের নেতৃবৃন্দ।

হাদির মৃত্যু সংবাদ নিশ্চিতের পর যেকোনো ধরনের সহিংস ঘটনা এড়াতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ডঃ মুহাম্মদ ইউনুস তাৎক্ষণিকভাবে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন। সংক্ষিপ্ত ভাষণে তিনি হাদীর মৃত্যুর ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করে সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান জানান। তিনি দেশবাসীকে আশ্বস্ত করেন, হাদী’র হত্যাকাণ্ডে জড়িত সকল অপরাধীকে আইনের আওতায় আনা হবে এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হবে। হাদীর মৃত্যুতে আগামীকাল শনিবার একদিনের রাষ্ট্রীয় শোক পালনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।

এরপরও শাহবাগে উপস্থিত উত্তেজিত ছাত্র জনতার একাধিক দল বিভিন্ন গ্রুপে ভাগ হয়ে ঢাকায় অবস্থিত একাধিক স্থাপনায় ভাঙচুর চালায় এবং অগ্নি সংযোগ করে। এরমধ্যে দেশের শীর্ষস্থানীয় দুটি সংবাদপত্র ‘প্রথম আলো’ (বাংলা) এবং ‘দ্যা ডেইলি স্টার’ (ইংরেজি) পত্রিকা অফিসে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয় দেশের স্বনামধন্য ও ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ‘ছায়ানট’, ঢাকার ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে অবস্থিত জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়িতে।

প্রতিবাদের কিছু ছবি এখানে দেওয়া হল:

দেশের শীর্ষস্থানীয় দৈনিক প্রথম আলোর কার্যালয় আগুনে পুড়ছে।

 

দেশের শীর্ষস্থানীয় ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টারের কার্যালয় আগুনে ভস্মীভূত।

 

বিক্ষুব্ধ জনতার আক্রোশের শিকার হয়ে ঢাকার ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাসভবন (বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর) তৃতীয়বারের মতো পুড়ছে।

 

ব্যাপক ভাঙচুরের পর দেশের ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানট থেকে বাদ্যযন্ত্র ও সরঞ্জাম লুট করা হচ্ছে।

এছাড়া হাদির মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে গতরাতে সারাদেশে ব্যাপক বিক্ষোভ ও ভাঙচুরের খবর পাওয়া গেছে। এ সকল ঘটনায় আক্রান্তের শিকার হয় পতিত আওয়ামী লীগের স্থানীয় পার্টি অফিস এবং সাবেক মন্ত্রী ও নেতাদের বাসা বাড়ি। উত্তেজিত জনতা দেশের বিভাগীয় শহর চট্টগ্রামে অবস্থিত ভারতের সহকারী হাই কমিশনারের বাসভবনে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের জন্য এগিয়ে গেলে পুলিশ ছাত্র জনতাকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

আজ শুক্রবার। সরকারি ছুটির দিন। গত রাতের ঘটনায় রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় ঢাকা সহ সারাদেশে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর দহল জোরদার করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, গত ১২ ডিসেম্বর নির্বাচনী প্রচারণা শেষে রিকশায় ফেরার পথে গুলিবিদ্ধ হন শরিফ ওসমান হাদি। প্রথমে ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসা শেষে ওই দিনই এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয় তাকে। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য গত সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) সিঙ্গাপুর নিয়ে যাওয়া হয়।