একাত্তরে মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করা, শরণার্থী শিবিরের বিভিন্ন সাংগঠনিক কর্মকান্ড পরিচালনা করা, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের নিজগৃহে আশ্রয় দেওয়া, প্রচারপত্র, লিফলেট বিলি করার দায়িত্বও পালন করেছেন বাংলার সাহসী নারীরা ।
মুক্তিযুদ্ধে নারী সংগঠক হিসেবে যাঁরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন, তাঁদের মধ্যে ১৯৭০ এর সংরক্ষিত মহিলা আসনের নির্বাচিত মহিলা আসন-১ নূরজাহান মুরশিদ, মহিলা আসন-২ রাফিয়া আকতার ডলি, মহিলা আসন-৩ সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, মহিলা আসন-৪ মমতাজ বেগম, মহিলা আসন-৭ বদরুন্নেছা আহম্মদ। এছাড়াও মতিয়া চৌধুরী, মালেকা বেগম, ডা. মাখদুমা নার্গিস রত্না, ডা. নুরুন নাহার চৌধুরী, কবি সুফিয়া কামাল, শামসুন নাহার রহমান রোজ, সেলিনা বানু, আশালতা সেন, আয়শা খানম প্রমুখ নারী নেত্রীরাও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।
প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে দিল্লিতে বাংলাদেশের পক্ষে সমর্থন ও স্বীকৃতি আদায়ে এম.এন.এ নূরজাহান মুরশিদ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি তিনজনের প্রতিনিধি দলের হয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এরপর এক এক করে রাষ্ট্রপতি শ্রী ভি. ভি. গিরি, প্রতিরক্ষামন্ত্রী জগজ্জীবন রাম, পররাষ্ট্রমন্ত্রী শরণসিং, স্পিকার ধীলন, শিক্ষামন্ত্রী সিদ্ধার্থ শঙ্কর রায়, শিল্পমন্ত্রী মঈনুল হক চৌধুরী ও বিরোধী দলের নেতা ফখরুদ্দীন আলী আহমদের সঙ্গে দেখা করেন।
নূরজাহান মুরশিদ ‘আমার কিছু স্মৃতিকথা’ গ্রন্থে লিখেছেন, তিনি মুজিবনগর সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে দিল্লির পার্লামেন্ট হাউসের সেন্ট্রাল হলে ভারতীয় বিধানসভার উভয় পরিষদের যুক্ত অধিবেশনে ভাষণ দিয়ে ভারত সরকারের প্রতি বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্বীকৃতির দাবি জানান। তিনি বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামের পক্ষে সমর্থন আদায়ের জন্য ভারতের বোম্বে, লাক্ষৌ, মাদ্রাজের রাজ্যপাল, মুখ্য মন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। পাশাপাশি তিনি ভারতের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে প্রচারণাও চালান। ভারতের পার্লামেন্টের যুক্ত অধিবেশনে তিনি এ বিষয়ে বক্তব্য দিলে তাঁর প্রতি ক্ষুব্ধ হয়ে পাকিস্তানের সামরিক প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান নিরুদ্দেশ অবস্থাতেই তাঁকে ১৪ বছরের কারাদন্ডে দন্ডিত এবং তাঁর বিষয়-সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার আদেশ জারি করেন।
এম.এন.এ বদরুন্নেসা আহমেদ মুজিবনগর মহিলা পুনর্বাসন কার্যকলাপ ও মহিলা সংগঠক হিসেবে মুজিবনগরের সভানেত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বাংলাদেশ সরকারের (অস্থায়ী) প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদের নির্দেশে শরণার্থী ক্যাম্পগুলো পরিদর্শন করে রিপোর্ট পেশ করতেন। শরণার্থীদের মাঝে চিকিৎসাসহ ত্রাণসামগ্রী সুষ্ঠু বিতরণ এবং শরণার্থীদের মধ্য থেকে নারীদের মুক্তিযোদ্ধা প্রশিক্ষণে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন।
এমএনএ সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী মুক্তিযুদ্ধে মেয়েদের অংশগ্রহণের প্রস্তুতির জন্য মার্চের প্রথম সপ্তাহে রাজধানীর ইন্দিরা রোডের বাসায় ডামি রাইফেলের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেন। জুন মাসের প্রথম দিকে সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী মুজিবনগর সরকার ও ভারত সরকারের সহযোগিতায় কলকাতার পদ্মপুকুরের গোবরাতে নারী মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে গড়ে তোলেন ‘গোবরা মহিলা মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্প’। এই ক্যাম্পের তিনি পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। স্বাধীনতার পর দেশে ফিরে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে নির্যাতিত নারীদের পুনর্বাসনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। তিনি ‘নারী পুনর্বাসন বোর্ডের’ পরিচালনার দায়িত্ব পালন করেন।
এমএনএ সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর নির্দেশে মুকুল মজুমদার কলকাতায় মহেন্দ্র রায় লেনের ‘গোবরা মহিলা মুক্তিযোদ্ধা’ ক্যাম্পের সহকারী পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। এ প্রসঙ্গে মুক্তিযোদ্ধা মুকুল মজুমদার বলেন, ক্যাম্পের মেয়েদের কার কি সমস্যা আমাকে তা দেখার নির্দেশ দিয়েছিলেন সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী। বিচক্ষণতার সাথে সেই নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করতাম। প্রথম ব্যাচে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ১৬ (ষোল) জন মেয়েকে যুদ্ধের ময়দানে পাঠান হয়। আরও ১৬ জনকে তৈরি করা হয়। দুই ব্যাচে ৩২ জনকে প্রস্তুত করা হয়। প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে মাসে একশ টাকা ভাতা দেওয়া হতো।
তিনি আরো বলেন, সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ ক্যাম্পগুলো পরিদর্শনে যেতাম। মাঝে মাঝে শরণার্থী ক্যাম্পে গিয়ে মেয়েদের রিক্রুট করতাম। সল্টলেক শরণার্থী ক্যাম্প থেকে নবম-দশম শ্রেনিতে পড়া ২৭ (সাতাশ) জন মেয়েকে মনোনীত করা হয়েছিল। তাঁদের মধ্যে শিরিন বানু মিতিল আর তাঁর সাথে তিনজন মেয়েকে ক্যাম্পে নিয়ে আসি। বাকি ২২ জনকে সল্টলেক শরণার্থী ক্যাম্পে উপেন্দ্রনাথ নামের একজন স্কুলশিক্ষক পৌঁছে দিয়েছিলেন। এই মেয়েদের এখানে ব্যাচ বাই ব্যাচ ট্রেনিং করানো হয়। ওদের কাউকে কাউকে আগরতলার বিশ্রামগঞ্জ হাসপাতাল, কুপ্তাখালী ক্যাম্পে পাঠানো হয়।
অক্টোবরের দিকে সপ্তম নৌবহর আসার খবর পাওয়া যায়। এমএনএ রাফিয়া আখতার ডলি’র নেতৃত্বে মুুকুল মজুমদারসহ ক্যাম্পের অনেক মেয়ে কলকাতার রাজপথে নামেন। ‘সপ্তম নৌবহর ফিরিয়ে নাও, ফিরিয়ে নাও’ তাঁদের স্লোগানে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে কোলকাতার রাজপথ। কোলকাতার অমৃতবাজার পত্রিকায় সংবাদসহ তাঁদের ছবি প্রকাশ হয় ।
এমএনএ রাফিয়া আখতার ডলি কলকাতা ও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলকাতা, বনগাঁ ও বারাসাতসহ বিভিন্ন এলাকার মানুষের কাছে গিয়ে মুক্তি সংগ্রামের জন্য জনমত, অর্থ ও কাপড়-চোপড় সংগ্রহ করেন। এছাড়া শরণার্থী শিবিরে থাকা মানুষ এবং মুক্তিযোদ্ধাদের পোশাক তৈরির জন্য ‘সায়েরা বানু সেলাই কেন্দ্র’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেন কলকাতায়। কলকাতার পার্ক সার্কাসে ‘খাইরুন্নেসা কল্যাণ সমিতি’র মাধ্যমে বিভিন্ন বিদেশি সাহায্য সংস্থা থেকে ত্রাণ সংগ্রহ ও শরণার্থী শিবিরসমূহে তা বিতরণ করতেন।
এমএনএ মমতাজ বেগম মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হিসেবে মুজিবনগর সরকার গঠনের আলোচনায় অংশ নেন। প্রবাসীদের সংগঠিত করেছিলেন আশালতা সেন। তিনি তখন নিউইয়র্কে ছিলেন। এছাড়া নাম না জানা অনেক নারী দেশের বিভিন্ন স্থানে ছোট ছোট দল, ক্যাম্প গঠন করে সাংগঠনিক কাজ করেছেন। সিরাজগঞ্জের সৈয়দা ইসাবেলা রৌমারি ইয়ুথ ক্যাম্পের মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণের সমস্ত কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন।
ন্যাপ নেত্রী মতিয়া চৌধুরী দিল্লিতে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে সহায়ক সমিতির কনফারেন্সে যোগ দেন। শরণার্থী হিসেবে বাংলাদেশের বক্তব্য তুলে ধরেন। শুধু তাই নয়, তিনি এবং বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদিকা মালেকা বেগম পশ্চিমবঙ্গের বসিরহাট এলাকায় ছোট ছোট সভা করে শরণার্থীদের উজ্জীবিত করতেন।
এ প্রসঙ্গে মুক্তিযোদ্ধা মালেকা বেগম বলেন, ভারতীয় নারী ফেডারেশনের আমন্ত্রণে মতিয়া চৌধুরী এবং আমি একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগ দিতে দিল্লি যাই। সেখানে আমরা ভারতের প্রেসিডেন্ট ভি ভি গিরির সঙ্গে আলোচনা করার সুযোগ পাই। অন্যদিকে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বর্বরতার বিরুদ্ধে এবং বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সমর্থনে একাত্তরের জুলাই মাসে দিল্লিতে অস্ট্রেলিয়ান দূতাবাসের সামনে অস্ট্রেলীয় জনগণ অনশন করেন। ভারতীয় মেয়েদের সমর্থন আদায়ের জন্য তাঁদের সঙ্গে বিশ্ব গণতান্ত্রিক নারী ফেডারেশনের নেত্রী ফ্রিডা ব্রাউন, মতিয়া চৌধুরী ও আমি অনশনে যোগ দিই। কলকাতা থেকে শুরু করে জলপাইগুড়ি, পানিপথ, হরিয়ানা, পাঞ্জাব, দিল্লি প্রভৃতি স্থানে প্রচার প্রচারণা চালাই।
তিনি আরো বলেন- মুক্তিযুদ্ধ, পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর গণহত্যা, নারী নির্যাতন, পাশবিকতা, স্বাধীনতাকামী জনগণের ওপর চাপিয়ে দেওয়া যুদ্ধ ইত্যাদি বিষয়ে সারা ভারতবর্ষে প্রচার আন্দোলন চালিয়েছি। সংগঠিত উদ্যোগে পরিচালিত এই কাজের ব্যাপক শুভকর প্রভাব পড়েছিল ভারতীয় নারী সমাজের ওপর। ভারতীয় নারী ফেডারেশনের নেতা অরুণা আসফ আলী, রেণু চক্রবর্তী, বিমলা ফারুকী, গীতা মুখার্জী, বাণী দাশগুপ্ত, ইলা মিত্র, কল্পনা দত্ত (যোশি), বিদ্যা মুন্সী, নিবেদিতা নাগসহ বহু নারী আমাদের আবেদনে সাড়া দিয়ে চলমান আন্দোলন-সংগ্রামের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেন।
পাকিস্তানি বাহিনীর নারী নির্যাতনের উপর জাতিসংঘের তদন্ত কমিটি গঠন করার দাবি জানিয়ে মালেকা বেগম ২৬ সেপ্টেম্বর এক বিবৃতি দেন। বিবৃতিতে উল্লেখ করেন- ‘বাংলাদেশের নারীদের চরম নির্যাতিত অবস্থার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ এবং পাকিস্তানী সেনাদের এই নারী অত্যাচারের বিষয়টি তদন্ত করার জন্য একটি বিশেষ তদন্ত কমিটি গঠন করার উদ্দেশ্যে জাতিসংঘের কাছে আবেদন জানাই।’
৪ অক্টোবর বাংলাদেশের নারীদের ওপর পাকিস্তানি ফৌজের অত্যাচারের ঘটনা তদন্ত করার জন্য তদন্ত কমিটি গঠনের লক্ষ্যে রাষ্ট্রসংঘের (জাতিসংঘ) প্রতি বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের পক্ষ থেকে আবেদন জানান মালেকা বেগম।
অন্যদিকে মনোরমা বসু, হেনা দাস, শান্তি দত্ত, সেলিনা বানু নারীদের সংগঠিত করার কাজ করেন। যুদ্ধ চলাকালীন ভারতীয় মেয়েদের সমর্থন আদায়ের জন্য কলকাতা থেকে শুরু করে জলপাইগুড়ি, পানিপথ, হরিয়ানা, পাঞ্জাব, দিল্লি প্রভৃতি স্থানে সভা করেন। বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরের নারীদের সাথে যোগাযোগ করেন। সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
আয়শা খানম, ডা. মাখদুমা নার্গিস রত্না, ডা. ফওজিয়া মোসলেম, ফরিদা আক্তার, মুনিরা আক্তার, রোকেয়া বেগম, মিনি মর্জিনা, মিসেস রউফ, ঢাকার চারুকলার লাইব্রেরিয়ান জাহানারা বেগম, পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙামাটি কলেজের অধ্যাপিকা লক্ষ্মী রানী আইচ প্রমুখ আগরতলায় মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হিসেবে বিভিন্ন কাজে অংশগ্রহণ করেন। সেখানে বাংলাদেশের বিভিন্ন পত্রিকা, খবর, বুলেটিন এবং শরণার্থীদের কাছ থেকে নারীদের উপর চালানো পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অত্যাচারের তথ্য সংগ্রহ করে মহিলা পরিষদের পক্ষ থেকে বুকলেট লেখার কাজও সম্পন্ন করেন।
মুক্তিযোদ্ধা ডা. মাখদুমা নার্গিস রত্নার মতে, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে আগরতলাতে যারা মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়ার জন্য আসতেন তাদের রিক্রুট করে বিভিন্ন ট্রেনিং ক্যাম্পে পাঠান হত। তিনি ভলাণ্টিয়ারের দায়িত্ব পালন করেন। সেই সঙ্গে ক্যাম্পে-ক্যাম্পে গিয়ে নারীদের নিয়ে বৈঠক করে তাদের উদ্বুদ্ধ করতেন। শরণার্থী শিবিরে গিয়ে রোগী দেখতেন।
কবি সুফিয়া কামাল আর শামসুন নাহার রহমান রোজ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে ঢাকায় থেকেও পাকিস্তানি হানাদারবাহিনীর দৃষ্টি এড়িয়ে অনেক মুক্তিযোদ্ধা বুদ্ধিজীবীকে ভারতে পাঠিয়েছেন। শামসুন নাহার রহমান রোজের সহযোগিতায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক রেহমান সোবহান এবং অধ্যাপক আনিসুর রহমান ২৫ মার্চের কয়েক দিন পরই নিরাপদে ভারতে পৌছুতে পেরেছিলেন।
এ ব্যাপারে ফ্যাশন ডিজাইনার বিবি রাসেল বলেন, আমার মা মুক্তিযুদ্ধে অনেক গুণী ব্যক্তিকে নিরাপদে আমার নানা বাড়ি বেরাইদ দিয়ে ভারতে পৌঁছান। আমাদের বাড়িতে ২৫ মার্চের পরই অধ্যাপক রেহমান সোবহান আসেন। তাঁর লম্বা চুল, জুলফি ছিল। তাঁকে সবাই চিনতেন। পথে যাতে তাঁর কোনো বিপদ না হয়, কেউ যাতে তাঁকে চিনতে না পারে, এ জন্য মেকওভার করে গেটআপ পরিবর্তন করে আমি তাঁর সাজসজ্জা পাল্টে দিই। তাঁর দুহাতে লোম ছিল। সেগুলো পরিষ্কার করি। তাঁর মাথায় টুপি পরিয়ে মৌলভি সাজিয়ে দিই। লোক মারফত আমাদের বাসা থেকে কিছুটা পথ হেঁটে, লঞ্চে কুমিল্লায় যান তাঁরা। এরপর তাঁদের কুমিল্লা বর্ডার দিয়ে আগরতলা হয়ে কলকাতায় পৌঁছান। এপ্রিলের শেষ দিকে অর্থনীতিবিদ ড. নুরুল ইসলাম ও চিত্রশিল্পী দেবদাস চক্রবর্তী, মে মাসের প্রথম সপ্তাহে সরকারি কর্মকর্তা জামিল চৌধুরী আমার নানাবাড়ি বেরাইদে যান। ওখান থেকে মা তাঁদের কুরিয়ারের মাধ্যমে আগরতলায় পাঠান। মে মাসের শেষ দিকে অর্থনীতিবিদ ড. স্বদেশ রঞ্জন বোস, সাংবাদিক আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীকেও একইভাবে পাঠানো হয়। মা উর্দুতে কথা বলতে পারতেন। কোনো সমস্যায় পড়লে মা পাকিস্তানি সেনাদের সাথে উর্দুতে কথা বলতেন।

