শুক্রবারের সকাল। ঘড়ির কাঁটায় সময় তখন ১০টা ৩৮ মিনিট। সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় কর্মজীবী মানুষের অনেকেই তখনো ঘুমিয়ে ছিলেন। কেউ কেউ সকালের নাশতা করছিলেন, কেউবা ছিলেন বাজারে। হঠাৎ কম্পন। প্রথমে কিছুটা হতভম্ব হয়ে গেলেও কয়েক সেকেন্ডেই বোঝা গেল, আঘাত হেনেছে ভূমিকম্প। যার ঝাঁকুনি ছিল অত্যাধিক। দেশের মধ্যে স্মরণকালে এমন কম্পন কেউ অনুভব করেনি।

ভূমিকম্পটির রিখটার স্কেলে মাত্রা ছিল ৫.৭, যা মাঝারি মানের। কিন্তু এটির উৎপত্তিস্থল (epicenter) ঢাকার নিকটবর্তী জেলা নরসিংদীর মাধবদীতে হওয়ায় এটি পুরো বাংলাদেশকে কাঁপিয়ে দেয়।
রিখটার স্কেলে এ ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৫ দশমিক ৭, অর্থাৎ মাঝারি। কিন্তু উৎপত্তিস্থল ঢাকার পাশের জেলা শহর নরসিংদীর মাধবদীতে হওয়ায় তা পুরো দেশকে নাড়িয়ে দেয়। কেঁপে উঠে গোটা বাংলাদেশ। সাম্প্রতিক সময়ে দেশে উৎপত্তি হওয়া সবচেয়ে বড় ভূমিকম্প ছিল এটি। এতে অবকাঠামোগত প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। শিশুসহ নিহত হয়েছে অন্তত ১০ জন। আহত হয়েছেন ৪ শতাধিক মানুষ।
ভূমিকম্পে দেশের বিভিন্ন জেলায় ঘরবাড়ি ধসে এবং অন্যান্য দুর্ঘটনায় হতাহতের খবরে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ডঃ মুহাম্মদ ইউনূস।
ঢাকায় ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের একটি তালিকা দিয়েছে জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন অফিস। যেখানে রাজধানীর ১৪টি এলাকায় ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার খবর জানানো হয়েছে।

ভূমিকম্পে পুরান ঢাকায় একটি পাঁচতলা ভবনের রেলিং ভেঙে পড়ে এক পথচারীর মৃত্যু হয়। এর পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বজায় রাখতে সেনাবাহিনী মোতায়েন করে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাটি ঘিরে ফেলা হয়।
শুক্রবার রাতে ঢাকা জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন অফিসার মো. সালাহ উদ্দীন-আল-ওয়াদুদ এর স্বাক্ষর করা একটি বার্তায় ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের প্রাথমিক তালিকা উল্লেখ করা হয়।
জানানো হয়, রাজধানীর মালিবাগ চৌধুরী পাড়া, আরমানিটোলা, সূত্রাপুর, বনানী ও কলাবাগানসহ মোট চৌদ্দটি এলাকার ১৪টি ভবন শুক্রবার সকালে সংগঠিত ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বাংলাদেশে শুক্রবারের ভূমিকম্পে মৃত্যের সংখ্যা বেড়ে ১০ জনে দাঁড়িয়েছে। ঢাকায় চারজন, ভূমিকম্পে কেন্দ্রস্থল নরসিংদীতে পাঁচ জন এবং নারায়ণগঞ্জে একজন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
এ পর্যন্ত সাড়ে চারশয়েরও বেশি মানুষ আহত হওয়ার খবর পেয়েছেন বলে সন্ধ্যায় বার্তা সংস্থা প্রেসেঞ্জা’কে জানান দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের পরিবীক্ষণ ও তথ্য ব্যবস্থাপনা অনুবিভাগের পরিচালক নিতাই চন্দ্র দে সরকার।

